আপন ঘরে পরের আমি

a group exhibition curated by MUSTAFA ZAMAN

December 12-31, 2023, Dwip Gallery, 1/1, Block D (g floor), Lalmatia, Dhaka

আত্ম ও অপর: শিল্পের মাঝে ন-শিল্পের ঠিকানা

আপন সত্তায় অপর কি করে জন্ম লয় তা হয়তো সাধু-সন্ত-ফকিরদের জানা আছে। দুই বাংলার ইতিহাসের আলোকে নিশ্চিত করে বলা চলে যে, শিল্প যে আমির মধ্যে না থেকে অন্য আমি সন্ধ্যানের ক্ষেত্র হতে পারে তা কবি রবীন্দ্রনাথের ছবিতে সবার আগে টের পাওয়া গেল। কবির পরিচিত জগতে এ ছিল অন্য আরেক জগতের আকারায়নের উৎসব। আমাদের কালে শিল্পভাষার সাধারণ গণিতের মধ্যে যদি নতুন গণিত আমদানি করতে হয়, তা এই অপরের সন্ধান না করে সম্ভব হবে না। কারণ নতুনত্ব হিসাবের অতীত — অংক করে করে তা গড়ে তোলা যায় না। আমি — বিশেষ করে প্রচারমূখী আমি — জাগতিক হিসাবনিকাশের সূত্রে নিঃসন্দেহে এক নিরেট পাথরে পরিণত হয় অতি সহজে। ‘আপন ঘরে পরের আমি’ আপাত স্বাভাবিকতা নির্ভর এমত শিল্পীসত্তার বাইরের আমিকে হাজির করবার প্রকল্প।

দেহের উপর থেকে পর্দা কি করে ও কখন সরে যায়? ফরাসি দার্শনিক  সার্ত্রের মতে যখন আমরা আপনাকে অপরের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পাই, তখন প্রথম দেহ  নিজের কাছে  প্রকাশিত হয়। এই প্রস্তাব থেকে আপন ও পরের সম্পর্ক বুঝে নেয়া কঠিন হয় না। কিন্তু আপন ঘরে পরের আমিটিকে বুঝতে নিজের মধ্যে অপরের অবস্থান বিষয়ে আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক ভাবনা জরুরি হয়ে পরে। পহেলাই জানতে হয় যে দেহঘর একের অধিক কুঠুরীতে বিভক্ত — এর মধ্যে আপন ও পর উভয়-ই বসবাস করে। শিল্পী যে সত্তা তা একক কোনো বস্তু না ।  শিল্পীর (আত্ম)পরিচয় সমাজে প্রতিষ্ঠার পথ সহজ করে দেয় — অমন বোতলজাতকৃত একমাত্রিক ধারণার বাইরে বের হয়ে নতুন সত্তা তৈরি করা আজকের শিল্পীর মূল চ্যালেঞ্জ। এই কর্মে তার অপর সত্তার সন্ধ্যান ছাড়া কোন ইলাহ নাই।

এই যে অপর, এ শুধু ধর্মে ও কর্মে প্রকাশিত হয়। এর কোনো মূর্তি হয় না। যে আমি মূর্তিধারী, সেই আমি তার এনালিটিক বা বিশ্লেষণী জ্ঞান দিয়ে অপরকে তেমন একটা ব্যাখ্যা করতে পারে না। অপরের সূত্রে আপনকে প্রকাশ করার মধ্যে দিয়ে যদি নতুন শৈল্পিক ভাষা অর্জিত হলো তা আসলে শিল্পের (অর্থাৎ প্রত্যাশিত ও প্রতিষ্ঠিত শিল্পভাষার) মধ্যে ন-শিল্পের খোঁজ, বা শিল্পের মাঝে শিল্পবহির্ভূত বিষয় ও বস্তু অঙ্গীভূত করে নিজের ভাষাকে ‘সহজ’ পথে নিয়ে আসার অবৈজ্ঞানিক অথচ ফলদায়ী প্রজেক্টের সূত্রে সম্ভব হলো।

মোস্তফা জামান

 

অংশগ্রহণকারী শিল্পীবৃন্দ:

আতা মজলিশ, সুবর্না মোর্শেদা, মোস্তফা জামান, রাজীব দত্ত, ইমরান সোহেল, সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির, মোঃ জোবায়ের হোসেন জ্যোতি, সালমা আবেদীন পৃথি, আফসানা শারমিন ঝুমা, আবীর সোম, কাজী তাহ্‌সিন আগাজ অপূর্ব, তাইয়ারা ফারহানা তারেক।